۩ শক্তিশালী দুর্গগুলো আজও মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে অতীতের গৌরবের সাক্ষী হয়ে ۩



মধ্যযুগীয় রাজার ছিলেন খুবই প্রতাপশালী এবং ক্ষমতার অধিকারী। তাদের এই শক্তির মূল উৎস ছিল শক্তিশালী ও সুরক্ষিত প্রাসাদ দূর্গ। দুর্ভেদ্য এই সব প্রাসাদ দূর্গে বসেই তারা তাদের সুবিশাল সম্রাজ্য শাসন করতেন। একেবারে প্রথম দিকে প্রাসাদ দূর্গ তৈরি করা হত কাঠ দিয়ে। আমাদের উপমহাদেশীয় ইতিহাসে তিতুমীরের বাঁশেরকেল্লা বীরত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য বহন করছে। তিতুমীরের বাঁশেরকেল্লাটি হয় তো সুরক্ষিতর দিক দিয়ে কিছুই না কিন্তু ইংরেজদের অত্যাচার আর বৈসম্যের বিরুদ্ধে মানুষের মনে বিদ্রোহের যে দুর্গ গড়েছিল তা যে কোন পাথরের দুর্গের চেয়েও শক্তিশালীকরেছিল, এই দেখ কোথা থেকে কোথায় চলে গেছি।

তো এবার প্রসঙ্গে ফেরাযাক, দশম শতাব্দীতে পাথর ব্যবহার করে দুর্গ গুলো তৈরির প্রচলন শুরু হয়। এসব দুর্গগুলোর একদম মধ্যখানে থাকতো ‘কিপ’। কিপ হচ্ছে উঁচু আবাসিক ভবন বা টাওয়ার। মাঝেমধ্যে এই টাওয়ার ২০০ ফুট পর্যন্ত উঁচু করা হত। আর দুর্গের দেয়াল গুলো হত ১২ ফুট পুরু। সেখানে রাজা তার পরিবার ও সভাসদ দের নিয়ে থাকতেন এবং রাজ্য পরিচালনা করতেন। কিপের চারপাশে থাকতো একটি অথবা দুইটি বৃত্তাকার দেয়াল। মধ্যযুগীয় এই সব দুর্গগুলো এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে বন্ধুরা ও মিত্ররা অবাধে যাওয়ার সুযোগ পেত।কিন্তু শত্রুদের ক্ষেত্রে দুর্গে প্রবেশ করা এক কথায় অসম্ভব ছিল। দুর্গের প্রবেশ মুখে থাকতো একটি গেটহাউজ বা ফটকঘর। এই ফটকঘরের প্রচলিত নাম ‘বারবিকান’। দুর্গে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে আগে তাকে অস্ত্র সমর্পণ করতে হত যদি সঙ্গে অস্ত্র থাকতো। আর তারপর পেরিয়ে যেতে হত ড্র-ব্রিজ। এই ‘ড্র-ব্রিজ’ হল এক ধরনের সেতু, যা ইচ্ছে মত নামানো অথবা উঠিয়ে রাখা যায়। ড্র-ব্রিজের নিচে থাকতো জলভর্তি পরিখা। ড্র-ব্রিজের পেছনে আবার বিশাল লোহার গেট যা কিনা ‘পোর্ট কালিস’ নামে পরিচিত ছিল। মুহূর্তের মধ্যে লোহার গেট ফেলে বন্দ্ধ করা যায় দুর্গের ফটক। দুর্গের দেয়ালগুলোর উপরে দাড়িয়ে থাকার ও হাটার ব্যবস্থা ছিল। সেখান থেকে সৈন্যরা তীর, বা পাথর ছুড়ে মারতে পারতো। এই অবস্থান টাকে বলা হত ‘প্যারাপিট’।সেখান থেকে শত্রুর উপর গরম তেলও ঢালা হতো। আজ আপনাদের কিছু বিখ্যাত প্রাসাদ দুর্গ সর্ম্পকে বলব।

হাইমেজি দুর্গ (Himanij castle):
জাপানের এই প্রাসাদ দুর্গটি চতুর্থ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। জাপানের ভূপতিদের বলা হতো ‘দাইমিয়ো’। তাদের যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই থাকতো, তাই নিজেদের সুরক্ষার জন্য তারা তৈরি করেছিলেন শক্তিশালী প্রাসাদ দুর্গ। সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে তারা বসবাস করতেন।আর সুরক্ষার ভা ছিল জাপানী যোদ্ধাদের উপর। এরা সামুরাই নামে পরিচিত।





হাইমেজি দুর্গ  ও তেমনি এক জাপানী ভূপতির সুরক্ষিত আবাসস্থল। এর প্রধান টাওয়ারটি কাঠের। তবে গোলাবারুদ ঠেকানোর জন্য টাওয়ারের গায়ে সাদা প্লাস্টার রয়েছে।

লচিস দুর্গ (leach castle):  
ফ্রান্সের এই প্রাসাদ দুর্গটি নির্মিত হয়েছিল একাদশ শতাব্দীতে।প্রাসাদ দুর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হওয়া ছাড়াও রাজা একাদশ লুইএর সময় এটি বন্দীশালা হিসাবেও কাজে লাগানো হয়। রাজা একাদশ লুই ছোট ছোট এমন সব খাঁচার মধ্যে বন্দীদের রাখতো যে তারা না পারতো দাড়াতে না পারত শুতে। মাঝেমধ্যে খাঁচাগুলো ছাদে ঝুলিয়েও রাখা হতো।






ক্যাসটিলো দ্য সান মারকোস (Castillo de San Marcos):          
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লেমিঙ্গোর সেন্ট অগাস্টিনে এই দুর্গটি অবস্থিত। দুর্গটি গড়া হয় ১৬৯৫ সালে। এই দুর্গটি যুক্তরাষ্ট্রের একমাএ প্রাসাদ দুর্গ। স্প্যানিশরা এক ধরনের সামুদ্রিক পাথর দিয়ে প্রাসাদ দুর্গটি গড়ে তোলে। এই পাথর গুলো কোকুইনা নামে পরিচিত। শত্রুরা কামানের গোলা ছুড়ে কোকুইনা তৈরি এই দেয়ালের কিছুই করতে পারতনা। দেয়াল চুড়মার করার বদলে কামানের গোলা দেয়ালে ঢুকে পরতো। অনেকটা স্পঞ্জের ভেতর কিছু ঢুকিয়ে দেয়ার মত। জলদস্যুরা ও ইংরেজরা বহু চেষ্টা করেও এই দুর্গ দখল করতে পারেনি।




টাওয়ার অব লন্ডন (Tower of London):
টাওয়ার অব লন্ডন দুর্গটি ১০৮৭ সালে ইংল্যান্ডের নির্মিত হয়। হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দুর্গটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি একাধারে প্রাসাদ, বন্দিশালা, টাকশাল, এবং মানমন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। বর্তমানে এটি রাজমুকুটের মূল্যবান পাথরের যাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।






রোচেস্টার দুর্গ (Rochester castle):
ইংল্যান্ডের এই দুর্গটি তৈরি হয়েছিল ১০৮৭ সালে।দুর্গটির প্রাসাদটি ছিল ১১৩ ফুট উঁচু, কোণের মিনরগুলো আরো ১২ ফুট উঁচু। দেয়ালগুলোর পুরুত্ব প্রায় ১২ ফুট।শত্রুদের উপর  তীর বা পাথর ছুড়ে মারার জন্য একটি কাঠের মঞ্চ আছে দুর্গের মাথায়। ১২১৫ সালে দুর্গের আসল অধিপতি রাজা জন শত্রুর হাত থেকে পুনরুদ্ধার করেন এই দুর্গ।


হারলিক্ দুর্গ (Harlick castle):
১২৮৫ সালে এই প্রাসাদটি গড়া হয় ওয়েলস এ। এই প্রাসাদদুর্গের ভেতরকার উঁচু দেয়াল বাহিরকার নিচু দেয়াল ছাড়িয়ে গেছে।দুটো পোর্টকালিস বা লোহার কপাট রয়েছে এই প্রাসাদদুর্গে। ১২৯৪ সালে এই প্রাসাদদুর্গের মাত্র ৩৭ সৈন্য আটকে রেখেছিল গোটা ওয়েলস বাহিনীকে।


ওয়ার উইক (Warwick castle):  
ইংল্যান্ডের এই প্রাসাদদুর্গটি গড়া হয়েছে ১৩৯৪ সালে। লম্বা দুইটি টাওয়ার রয়েছে দুর্গটির সুরক্ষাব্যবস্থা জোড়দার করার জন্য। একটি টাওয়ারের নাম সিজার্স টাওয়ার। ছয়তলা এই টাওয়ারের মাথায় রয়েছে দুই দুটি প্যারাপিট। ওপর টাওয়ারের নাম গাইস টাওয়ার, পঞ্চম তলা বিশিষ্ট এই টাওয়ারে রয়েছে একটি প্যারাপিট। আর টাওয়ার দুটি একটি বিশাল ড্র-ব্রিজের মাধ্যমে সংযুক্ত।




---------------------------------------------------------------------------------------------
---------------------------------------------------------------------------------------------

Thank you---///



Comments