Aliens - অন্য গ্রহ অন্য জীবন


আমরাই কি এই বিশাল মহাবিশ্বর একমাত্র বুদ্ধিমান প্রাণী? কিংবা,পৃথিবী ছাড়া কি আর কোথাও প্রানের অস্তিত্ব নেই? মানুষের মনে উদ্ভুদ এসব প্রশ্ন অনেক প্রাচিন। কিন্তু এসব প্রাচিন প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। আর মানুষ স্বভাবগতভাবেই কৌতূহলী প্রাণী। যার কারনেই আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর খুজে ফিরেছি।

মানুষের এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই আরো অনেক প্রশ্নের জন্ম হয়েছে।
তার সাথে কিছু কুসংস্কারেরও উদ্ভুদ হয়েছে যখনই ভিনগ্রহের প্রাণীর কথা আসে তখনই মানুষের মনে একইসাথে যেমন রহস্য,রোমাঞ্চ জন্ম হয় তেমনই জন্ম হয় ভয়ভীতির।কারন এলিয়েনের কথা উঠলেই সেখানে আর যেসব কথা ওঠে তা হল, তারা দেখতে কেমন? তারা কি আদৌ দৃশ্যমান নাকি কোন অদৃশ্য সত্ত্বা? তাদের আকার কি বিশাল নাকি এতই খুদ্র যে খালি চোখে দেখা যায় না? তাদের বুদ্ধিমত্তা আমাদের থেকেও অনেক উন্নত নাকি নির্বোধ? তারা কি আমাদের সাথে আদৌ বন্ধুত্বপূর্ণ নাকি ভয়ঙ্কর ধ্বংসাত্মক? এরকম বহু প্রশ্ন ভিনগ্রহের প্রাণী সম্বন্ধে ওঠে।
অনেকে মনে করেন আমাদের পৃথিবীতে কথিত এলিয়েনেরা এসেছে এবং আমাদের ফাঁকি দিয়েই তারা তাদের গবেষণা করে চলেছে। এর কারন এখনো আমাদের অজানা। এক্ষেত্রে অনেকে আবার বলেও ফেলেছেন তারা স্বচক্ষে এলিয়েন দেখেছে। তবে কারো সাথে  কথোপকথনের কথা শোনা যায়নি। তবে এলিয়েনদের দেখেছে এমন লোকদের মধ্যে অনেক  লোক আছে যাদের কথা ফেলে দেয়ার মত নয়। এদের মধ্যে অন্যতম অ্যামেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনালদ রিগান।
 তাছাড়া আমাদের পৃথিবীর একটি আশ্চর্য বস্তু পিরামিডের সাথে এলিয়েনের অনেক গল্প রয়েছে। যেমন, অনেকে বলে থাকেন যে এলিয়েনেরা এসে পিরামিড তৈরি করে দিয়েছে বা এর প্রযুক্তি দিয়ে গেছে। এই কথায় মানুষের যোগ্যতাকে খাটো করে দেখা হয়। তবে কথাটা কিন্তু চট করে ফেলে দেবারও নয়। কারন পিরামিড আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার(৪,৫০০) বছর আগে তৈরি করা হয়েছে। তাই এখনকার প্রযুক্তি ও সেই সময়ের প্রযুক্তির তুলনা করলেই ব্যাপারটা অনেক পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। কারন আমরা জানি কোন এক কারনে পৃথিবীর বিখ্যাত এক লাইব্রেরী পুড়িয়ে দেয়া হয়। এবং তখন থেকে পৃথিবীতে জ্ঞানের চর্চা বন্ধ ছিল এবং সভ্যতা উল্টো দিকে চলেছে। এ অবস্থা এক হাজার(১,০০০) বছর বিদ্যমান ছিল। তাই এর আগে সেই সময়ের প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান কেমন ছিল সে সম্বন্ধে আমাদের কোন ধারনাই নেই। এই কারনেই এলিয়েনের অস্তিত্ব যেমন বিশ্বাস করা যায় না, তেমনই অবিশ্বাস করাও কঠিন।

আজ আমাদের প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান অনেক উন্নত হয়েছে। তাই আমরা এখন কাল্পনিক বা অনুমান নির্ভর কথায় কান না দিয়ে হাতে কলমে প্রমান চাই। আর এই জন্নই বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গবেশনা চালাচ্ছেন। তারা অনেক উন্নতমানের টেলিস্কোপ ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছেন। এক্ষেত্রে প্রথমে আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্রহ থেকেই বিজ্ঞানীরা তাদের কাজ শুরু করেছেন। আমাদের নিকটতম এবং সবচেয়ে সম্ভাবনাময় গ্রহ হল মঙ্গল। সেখানে প্রানের সন্ধানের জন্য বিস্তর গবেশনা চলছে।
এখন সেখানে যে রোবটটি কাজ করছে তার নাম হল ‘কিউরিয়াসিটি রোভার’। এটি মঙ্গলগ্রহ সম্বন্ধে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং এখনো করে চলেছে। মঙ্গলগ্রহে সমুদ্র থাকার অস্তিত্ব রয়েছে। এমনকি সেখানে পানিও থাকতে পারে। আর যদি পানি থাকে তবে তার ফল  কি হবে তা জানার জন্য আমাদের আর অপেক্ষা করতে হবে। এখন আর একটু দূরে যাওয়া যাক। পানির সন্ধান পাওয়া গ্রহ এবং উপগ্রহের মদ্ধে ইউরপা আমাদের সবচেয়ে নিকটতম। ইউরপা বৃহস্পতির উপগ্রহ। এটা সম্পূর্ণ পানির তৈরি। এর তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নিচে এবং এর উপরি পৃষ্ঠ কঠিন বরফে আবৃত। ইউরপার অভ্যন্তরে রয়েছে তরল পানি। সেখানেও প্রান থাকা তেমন আশ্চর্যের কিছু না।
বিজ্ঞানিরা আমাদের এই সৌর জগতে প্রানের সন্ধান করার জন্য ভয়েজার১,২ নামে দুইটা অভিযান পাঠায়। তারা তাদের অভিযান সফলভাবে শেষ করেছে। তারপর আমাদের নিজস্ব ছায়াপথে গবেষণা করেছে। এখন বিজ্ঞানীদের টার্গেট হল আমাদের পাশের এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি। সেখানেও প্রান থাকতে পারে। তাছারা আমাদের মহাবিশ্বে এমন আর কোটি কোটি নক্ষত্র রয়েছে যেখানে প্রান থাকা অস্বাভাবিক হবে না। আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বে গ্রহের সংখ্যা পৃথিবীতে যে পরিমাণ বালুর কনা আছে তার থেকেও বেশি। আর এই সংখ্যাটি হল ৭এর পিঠে ২২টি শুন্য বসালে যত হয় তত।
এতক্ষন আমরা মহাবিশ্বে প্রানের সন্ধান করলাম। এখন একটু দেখা যাক এলিয়েনের সাথে আমাদের যগাযগের সম্ভাবনা কতটুকু বা মহাবিশ্বে প্রান থাকতে পারে এমন গ্রহের সংখ্যা আনুমানিক কত হতে পারে। এই সংখ্যা বের করার জন্য একটা বিখ্যাত সমিকরন রয়েছে, যার নাম ড্রেকের সমীকরণ।  এর ফলাফল একেবারে নিখুত না হলেও এটাই সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য পদ্ধতি। ড্রেকের সমীকরণটি হল, N=Rfpnef1fifcL। এই সমীকরণ ব্যবহার করে মোট যোগাযোগ সক্ষম সভ্যতার সংখ্যা বের করা যাবে। এখন সমীকরণটা সমাধান করা যাক।
এখানে, N হল যোগাযোগ সক্ষম সভ্যতার সংখ্যা্‌ R হল যোগ্য তারা সৃষ্টির হার, fp হল ওই সৃষ্ট তারায় গ্রহের উপস্থিতির হার, ne হল প্রতিটি নক্ষত্র পরিবারে পৃথিবীর মত গ্রহের উপস্থিতির হার, f1হল গ্রহগুলতে জিবনের উপস্থিতির হার, fc যোগাযোগ সক্ষম গ্রহের হার এবং L হল যোগাযোগ সক্ষম সভ্যতার জীবনকাল।
সমীকরণটাতে L নিয়ে একটু দন্দ আছে। L এর মান কোন ক্ষেত্রে মাত্র ১০ বছর আবার কোন ক্ষেত্রে ১কোটি বছর। তবে বিজ্ঞানী জোবরিন আমাদের পৃথিবীর প্রায় ৬০টি সভ্যতা পর্যালোচনা করে L এর গড় মান পেয়েছেন মাত্র ৩৭০বছর। কিন্তু ড্রেক সমীকরণের একটি রক্ষণশীল হিসাবে L=৫০,০০০ বছর ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে R=১০, fp=০.৫, ne=০.২, f1=০.২, fi=০.২, fc=০.২ ধরে মোট যোগাযোগ সক্ষম সভ্যতার সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ৪০০ বা প্রতি ৪হাজার ৩০০ আলোকবর্ষে একটি। কিন্তু এর বাতিক্রমও আছে। মান পরিবর্তন করে এ সংখ্যার পরিবর্তন করা হয়েছে। বিজ্ঞানী কার্ল সাগানের মতে সংখ্যাটি হবে ১০লাখ, যা আশার কথা।কিন্তু আমাদের দেখতে হবে L এর মান ১০ হোক আর ১০ মিলিয়ন হোক, তা যান শূন্যের কোঠায় না পৌছায়।
সামগ্রিক দিক পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে যে এই মহাবিশ্বে শুধু আমাদের থাকার সম্ভাবনাটা ক্ষীণ। তাই বলা যায় হয়ত এই অসীম মহাবিশ্বের কোন এক প্রান্তে বুদ্ধিমান প্রাণী থাকলেও থাকতে পারে। আর এই সম্ভাবনাটাই বেশি। তবে তাদের সাথে আমাদের কখনো যোগাযোগ সম্ভব হবে কিনা তা সময়ই বলতে পারে। আর যোগাযোগ হলে তাদের আচরন কেমন হবে তা নিয়ে আশঙ্কাতো আছেই। তাই প্রযুক্তির আরো উন্নয়ন এবং সময়ের পথ চলার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই যদিনা এলিয়েনদের প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান আমাদের থেকেও বেশি উন্নত হয়। 

ধন্যবাদ
(ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত)




Comments

Popular posts from this blog

Free download Electric circuit compiler - Electronics Workbench 5.12

Free Bengali Dictionary(ফ্রি ডাউলোড করুন বাংলা ডিকশনারী সফটওয়্যার)